শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ০৩ জুন ২০২৪ ২২ : ০৮Riya Patra
রিয়া পাত্র
ক্লান্ত ক্যাডার! কলকাতা উত্তর হোক কিম্বা বরানগর, দলীয় কার্যালয়ের দিকে তাকালে সেকথাই মনে আসবে। যদিও 'ক্লান্ত'? এপ্রশ্ন করলে, উত্তর আসছে, 'না না একবারেই না। এখন ফলাফলের অপেক্ষা। তারপর উচ্ছ্বাস। তারপর তো ক্লান্তি।' এরা কারা? যাঁরা গত কয়েকমাস প্রার্থীর সঙ্গে, বরং হিসেব করলে দেখা যাবে প্রার্থীর থেকে বেশি দৌড়-ঝাঁপ করেছেন। কেউ ঠিক করেছেন প্রার্থীর প্রচারের রুট ম্যাপ, কেউ ঠিক করেছেন সভা-রোড শোয়ে কত লোক আসবেন সেটা, কেউ মিটিং মিছিলের, জমায়েতের জলসহ সমগ্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন, কেউ বা পাড়ায় প্রচারের আগে কিনে এনেছিলেন মালা-ফুল, কেউ ঘুরে ঘুরে দলের পতাকা বেঁধেছেন, কেউ দেওয়াললিখেছেন, প্রার্থীর হয়ে লিফলেট সাঁটিয়েছেন। প্রচারে তাঁরা থেকেছেন প্রার্থীর পিছনে, আদতে প্রার্থীকে এগিয়ে দিয়েছেন এক কদম।
যেমন ধরুন রবি পাল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি। প্রার্থী-নাম ঘোষণার পর থেকে প্রতি পাড়ায় গিয়ে গিয়ে দেওয়ালে চুন দেওয়া থেকে, দেওয়াল লিখন করিয়েছেন দাঁড়িয়ে থেকে। প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডোর টু ডোর প্রচারে গিয়েছেন। একেবারে শেষ পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপ দেওয়ার কাজ পর্যালোচনা করেছেন, কোন বাড়ির দরজায় প্রার্থীর স্টিকার পড়ল নজর রেখেছেন সেদিকেও। সংগ্রাম সিনহা রায়, প্রার্থীর হয়ে প্রচারে কী করলেন? দীর্ঘ সময়ে তিনি এলাকার মানুষকে বুঝিয়েছেন কেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন মানুষ। সঙ্গেই দলের কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা দিনে দিনে তুলে ধরেছেন। অরিত্র পাল, সানু শিখর এই প্রজন্মের। অফিস ফেরত নিয়ম করে দলীয় কার্যালয়ে বসেছেন। ওয়ার্ডে, বুথে বুথে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভোটের শেষে এখন এজেন্টদের নিয়ে, ভোট গণনা নিয়ে কাজ করে চলেছেন। শুধু বিবেকানন্দ ক্লাব নয়, বেলেঘাটা থেকে পাথুরিয়াঘাটা তৃণমূল, বিজেপির কার্যালয়ে গেলেই দেখা মিলবে রোহিত ঘোষ, মিন্টু হালদার, সৌম্য ব্যানার্জি, প্রিয়াঙ্কা রায়দের। যাঁরা গত কয়েকমাস ধরে দিনরাত এক করে খেটেছেন। দলীয় কর্মী, ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট, কাউন্সিলর থেকে বিধায়ক, সভায় জলের দায়িত্ব, প্যান্ডেলের দায়িত্ব থেকে প্রচারে বক্তব্যের দায়িত্ব ভাগ করে পালন করেছেন। কলকাতা দক্ষিণের সঞ্জু ভট্টাচার্য আবার দীর্ঘ খাটাখাটনির পর এখন ব্যস্ত শেষ পর্যায়ের কাজে। তাঁর কাছে এখন ক্লান্তির কোনও জায়গা নেই। গত কয়েকমাস কী করলেন তিনি? বললেন, 'দল থেকে ভাগ করা হয়েছিল শুরুতেই। দিদি ( মালা রায়) সবসময় নজর রাখতেন সবকিছুর ওপর। আমাদের একটা টিম ওয়ার্ক হয়েছে। কেউ কাগজের কাজ করেছে, কেউ প্রচারে ফ্লেক্স, পতাকা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে। সবটাই ভাগ করে করেছি আমরা।' ভোট শেষেও প্রতাপাদিত্য রোডে মালা রায়ের সঙ্গেই দেখা গেল ছেলে নির্বাণ রায়কে। এই নির্বাচনের সব তাঁর নখদর্পণে। কীভাবে হল সব? বললেন, ' প্রথমেই নানা ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। কীভাবে প্রচার হবে। ডিজিটাল মিডিয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কীভাবে প্রচার হবে সেটা দেখা। তারপর কীভাবে প্রচার করবেন, কোন ওয়ার্ডে কবে, কখন যাবেন সেটা দেখতে হয়েছে। একটা টিম কাজ করেছে লম্বা সময় ধরে। ভোটের পর কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে কাজ হচ্ছে।' তবে একটু জেলার দিকে প্রচারের বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতি বিধানসভায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবজারভার ঠিক করা হয়েছিল, তাঁরা ব্লক প্রেসিডেন্ট, অঞ্চল নেতৃত্বকে নিয়ে ঠিক করেছিলেন অঞ্চলের মিটিং, মিছিল স্ট্রিট কর্নারের ব্লু প্রিন্ট। তবে প্রার্থী কবে কোন ব্লকে যাবেন প্রচারে, কোথা থেকে কোথা পর্যন্ত হবে প্রচার, কৌশল ঠিক করেছে আই প্যাক।
যাদবপুরের বুদ্ধদেব ঘোষ ভোট শেষে বলছেন, কমিউনিস্ট পার্টি যাঁরা করেন তাঁরা ক্লান্ত হন না। বললেন, 'প্রার্থী, কর্মী, সংগঠক আলাদা করে দেখি না। একেক জনের একেক রকম ভূমিকা থাকে। প্রার্থী হিসেবে সৃজনকে গোটা লোকসভা ঘুরতে হয়েছে। তবে আমাদের কমরেডরা এই লম্বা সময়কালে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। এমনকি তাঁদের পরিবারের লোকজনেরাও। সাংগঠনিক পরিশ্রম, বুথ পাহারা সব করতে হয়েছে।' কেউ যেমন গত দুমাসের বেশি সময় শুধু লাল পতাকা বয়ে নিয়ে গিয়েছেন, আবার সভা শেষে রেখে গিয়েছেন দলীয় কার্যালয়ে। কেউ গোটা প্রচার কাল দায়িত্ব সামলেছেন চা দেওয়ার। কেউ বা প্রার্থীর প্রচার কালে পাশে থেকেছেন, বলে দিয়েছেন, 'একবার বাঁ দিকে তাকান, অনেকে দাঁড়িয়ে বারান্দায়।' কিম্বা, 'ওই দূরের ভিড়ের দিকে একবার হাত নাড়ুন।' কেউ প্রচারের নানা মুহূর্তের ছবি তুলেছেন। কেউ বাড়ি ফিরেছেন রাত ১টায়, কেউ পরদিন সকালে ফের ৬টায় বেরিয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ শুধু প্রচারে থেকেছেন। একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে, শুধু এলাকার নয়, এলাকার বাইরের প্রচারেও গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এটাই বা কম কী! ভোট মিটলেও এই 'ক্যাডারদের' দায়িত্ব এখনও শেষ হয়নি। গণনার দিন অনেকেই কাউন্টিং এজেন্ট, কারও দায়িত্ব রয়েছে আবির কিনে আনার। আগামিকালের জন্য আগাম মিষ্টির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কয়েকজনের ওপর। ক্যাডারদের এখনই ক্লান্ত হওয়ার সময় কই?